শিরোনাম :

লোমহর্ষক হত্যার রহস্য উদঘাটন করে পুরস্কৃত হলেন নবীগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক- মোঃ আমিনুল ইসলাম


মাইনুল হক খাঁন, সুনামগঞ্জঃ

বহুল আলোচিত জাহির হত্যা মামলার লোমহর্ষক তথ্য উদঘাটন করে  পুরস্কৃত ও ভূয়সী প্রশংসায় প্রশংসিত  হলেন নবীগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ আমিনুল ইসলাম। হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ থানাধীন ৯নং বাউশা ইউনিয়নের দেবপাড়া (বাঁশডর) গ্রামের দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিজনা নদীর জল মহালসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বিরোধ ছিল। নবীগঞ্জ থানা পুলিশ, বাহুবল সার্কেলের এসপির নির্দেশনায় বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার চেষ্টা করেও পুরোপুরি নিষ্পত্তি করতে পারেনি শুধু উভয় গ্রুপের আধিপত্য বিস্তার এর কারণে। গত ১৫ই জুলাই২০২০ইং তারিখ দিবাগত রাতে নবীগঞ্জ থানায় সংবাদ আসে যে আগামীকাল সকালে বিজনা নদীর লিজকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হতে পারে। সংবাদ পেয়ে হবিগঞ্জ পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় নবীগঞ্জ সার্কেল এসপির নেতৃত্ত্বে নবীগঞ্জ থানা থেকে পুলিশের একটি টিম ঐদিন খুব সকালেই বাশডর গ্রামে অবস্থান নেন। এসময় দুই গ্রুপের মধ্যে  দাংগা যাতে সংঘটিত না হয় সে লক্ষে উভয় পক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।  পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখে পুলিশ থানায় চলে আসে। থানায় পৌঁছার পর পরই খবর আসে যে উভয় পক্ষের মধ্যে দাংগা হচ্ছে তখন দ্রুত পুলিশ আবার বাশডর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। পথের মধ্যেই খবর আসে জাহের আলী (৭৫) নামের একজন বৃদ্ধ লোক প্রতিপক্ষের ফিকলের আঘাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান। নবীগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখেন দাংগা থেমে গেছে তবে ভিকটিম জাহের আলীর বাড়িতে প্রচুর লোকজন জমায়েত হয়ে আছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভিকটিমের রক্তমাখা জামা ও ভিকটিম এর মৃতদেহ যে খাটে পড়েছিল তার নিচ থেকে ফিকলের রক্তমাখা সুচালো অগ্রভাগের অংশ উপস্থিত সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জব্দ করেন এবং লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করে। ঐদিনই হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার , বাহুবল সার্কেল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ১৭/জুলাই ২০২০ইং তারিখে ভিকটিমের বড় ছেলে আরশ আলী বাদী হয়ে প্রতিপক্ষের ৯২ জনসহ  নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা লোককে আসামি করে নবীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা দেয়া হয় পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলামকে। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বিপিএম, পিপিএম মহোদয়ের সার্বিক নির্দেশনায় এবং নবীগঞ্জ-বাহুবল সার্কেলের নেতৃত্বে হত্যা মামলাটির প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও প্রকৃত আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে টিম নবীগঞ্জ ও তদন্তকারী অফিসারের তদন্তে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়,ভিকটিম জাহের আলী(৭৫) উভয় পক্ষের দাঙ্গা চলাকালীন সময়ে ঘটনাস্থলেই ছিলনা। সে পান বিক্রির জন্য গ্রামের অদূরে পশ্চিম হাটিতে গিয়েছিল।দাঙ্গা শেষ হওয়ার প্রায় আধা ঘন্টা পর সে বাড়িতে এসে তার বাড়ীর ভিতরের কক্ষে খাটে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিল। গত ২২/০৪/২০২১ ইং তারিখে বাদীপক্ষের একই গোষ্ঠীর লোক মিছবাহ উদ্দীনকে গ্রেফতারের পর তাহাকে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে জাহের আলীকে ফিকল দিয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনাটি অকপটে স্বীকার করে এবং জানায় যে জাহের আলীর(৭৫) নিজের বড় ছেলে আরশ আলী তাহার দায়েরকৃত হত্যা মামলার সাক্ষীদের নিয়ে তাহার পিতার হত্যার পরিকল্পনা করে । শুধুমাত্র নিজেদের গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারের জন্য প্রতিপক্ষকে ফাসাতে!!! মৃত জাহের আলীর বড় ছেলে আরশ আলীর নেতৃত্বে সে সহ আরও ৫ জন খাটে শয়নরত জাহের আলীর পেটে ফিকল ঢুকিয়ে তাকে হত্যা করে। পরে সে নিজেই বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করে। পরে আসামী মিছবাহ উদ্দিনকে ধৃত করার পর তাহার দেওয়া তথ্য মোতাবেক শামছুল মিয়া ও জিলু মিয়াদেরকে গ্রেফতার করে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে তাহারা প্র্ত্যেকেই নিজের দোষ স্বীকার করতঃ বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রাদান করে। দীর্ঘ বন্ধুর পথ পেরিয়ে সেই সাফল্যের জন্য ভাল কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ অদ্য ০৮/০৫/২০২১খ্রিঃ তারিখ তদন্তকারী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম, পুঃপঃ(তদন্ত), নবীগঞ্জ থানা কে পুরস্কার প্রদান করেন,পুলিশ সুপার, হবিগঞ্জ এর পক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদ্য পুলিশ সুপার পদন্নোতি প্রাপ্ত) মোঃ আনোয়ার হোসেন, সাথে নেতৃত্ব দানকারী বাহুবল সার্কেল সদ্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদন্নোতি প্রাপ্ত পারভেজ আলম প্রমূখ।

Commentbox

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Recents