শিরোনাম :

ছয় দফা দিবসের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী: পঁচাত্তরে হারিয়ে ফেলা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ফিরে এসেছে



ডেস্ক রিপোর্ট:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা আমাদের মাঝে নেই; কিন্তু তার আদর্শ আছে। পঁচাত্তরের পর আমরা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ হারিয়ে ফেলেছিলাম; কিন্তু সে আদর্শ আবার ফিরে এসেছে। জাতির পিতার শিক্ষা নিয়েই বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। মর্যাদা নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। রক্ত কখনো বৃথা যায় না, এটাই প্রমাণিত সত্য।



ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষ্যে সোমবার সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে পূর্বে ধারণ করা ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭ জুন রক্তের অক্ষরে ছয় দফার দাবির কথা লিখে গিয়েছিল বলেই এই ছয় দফার ভিত্তিতেই নির্বাচন এবং যুদ্ধে বিজয় ও স্বাধীনতা অর্জন করি। ছয় দফার ভেতরেই এক দফা নিহিত ছিল। সেটা অন্তত আমরা পরিবারের সদস্যরা জানতাম। তিনি (বঙ্গবন্ধু) সব সময় বলতেন ছয় দফা মানেই এক দফা। অর্থাৎ স্বাধীনতা। আজকে আমরা সেই স্বাধীন জাতি। তবে বাঙালি জাতিকে তিনি যেভাবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, যে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, আর্থসামাজিক উন্নয়নে যে কর্মসূচি তিনি হাতে নিয়েছিলেন, দুর্ভাগ্য যে তা তিনি করে যেতে পারেননি।’ বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে তাকে এবং আমাদের পরিবারের সব সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমি ও আমার ছোট বোন বিদেশে ছিলাম, ছয় বছর দেশে আসতে পারিনি। আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করল। আমি দেশে ফিরে এলাম। তখন থেকে আমাদের একটাই চেষ্টা ছিল-জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলব। তিনি বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে রেখে গিয়েছিলেন। আজকে আল্লাহর রহমতে আমরা উন্নয়নশীল দেশ। 



বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। রক্ত কখনো বৃথা যায় না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা ছাত্রজীবন থেকেই এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সংগ্রাম করেছেন। বাঙালি জাতি একটা উন্নত জীবন পাবে, সুন্দর জীবন পাবে-এটাই তার আকাঙ্ক্ষা ছিল। তিনি সেটাই চেয়েছিলেন। তার সব সময় চিন্তা ছিল কীভাবে জাতিকে দুঃখ, দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দেবেন; ক্ষুধা, শোষণ, বঞ্চনা থেকে মুক্তি দিয়ে একটা উন্নত জীবন দেবেন। পাকিস্তান নামে যে দেশটি সৃষ্টি হয়েছিল, সেখানে তার যথেষ্ট অবদান ছিল; কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় যে পাকিস্তান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের রাষ্ট্রভাষা বাংলার ওপর আঘাত আসে। এর বিরুদ্ধে আন্দোলনও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র হিসাবে প্রথম শুরু করেছিলেন। সেই থেকেই যাত্রা শুরু। শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই বাঙালি জাতির ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য যে চিন্তা-চেতনাগুলো তার (বঙ্গবন্ধু) ভেতরে লালিত ছিল, সেটাই প্রতিফলিত হয়েছিল ছয় দফার মধ্যে। আর সেটা তার আরও সুযোগ এসে গেল ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের মধ্য দিয়ে। যখন দেখা গেল এই ভূখণ্ডের মানুষ সম্পূর্ণভাবেই নিরাপত্তাহীন। সেই সময় তিনি এই ছয় দফা দাবিটা উত্থাপন করেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ছয় দফা দাবি উত্থাপন করার সঙ্গে সঙ্গেই পাকিস্তানি শাসকদের কথা ছিল এটা পূর্ব পাকিস্তানকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন করার জন্যই এই দাবি। কিন্তু সেটা বাস্তব না। তিনি মানুষের অধিকারের কথা বলেছেন। শেখ হাসিনা বলেন, ছয় দফা দাবিকে জাতির পিতা নাম দিয়েছিলেন বাংলাদেশের মানুষের বাঁচার দাবি হিসাবে। তিনি যখন ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন, তিনি তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। দলের অনেকের দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকার মধ্যেই আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় ছয় দফাকে গ্রহণ করা হয়। এরপর ১৯ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ওই কাউন্সিলে তিনি বলেছিলেন, ছয় দফা প্রশ্নে কোনো আপস নাই। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, এরপর ২০ মার্চ পল্টন ময়দানে জনসভা হয়। সেই জনসভায় সবাই বক্তব্য দেন এবং ছয় দফাকে গ্রহণ করেন। তারপর তিনি (বঙ্গবন্ধু) শুরু করেন সারা বাংলাদেশ সফর। তিনি বাংলার প্রতিটি জেলায় আনাচে-কানাচে সফর করেন। ছয় দফার জন্য আন্দোলন গড়ে তোলেন। জনগণ এই ছয় দফাকে খুব দ্রুত গ্রহণ করে। তিনি বলেন, ছয় দফা দেওয়ার পর আন্দোলন চলতে থাকে, তিনি সফর করতে থাকেন। ৮ মে নারায়ণগঞ্জে জনসভা শেষে ফিরে আসার সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া চট্টগ্রাম, পাবনা, যশোরসহ খুলনা, ময়মনসিংহ, সিলেট-যেখানেই জনসভা করেন; এ সময় বিভিন্ন স্থানে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। বক্তৃতার করার কারণে তাকে গ্রেফতার করা হয়। জেলে নেওয়া হয়। আবার সেখান থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে আরেক জায়গায় জনসভা করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘মে মাসে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতারের পর তার মুক্তির দাবিতে এবং ছয় দফা বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন চলছিল। তিনি কারাবন্দি থাকা অবস্থায় ৭ জুন হরতাল ডাকা হয়। এখানে আমি আমার মায়ের কথা বলব। এই হরতাল সফল করার জন্য আমার মা বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন। তিনি ইন্টেলিজেন্স বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে আমাদের ছাত্রদের সঙ্গে, সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে হরতাল সফল করার জন্য কাজ করেছেন।’ শহিদ বুদ্ধিজীবী আলিম চৌধুরীর কন্যা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ড. নুজহাত চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ড. নাজমা শাহীন।

সূত্রঃ যুগান্তর

Commentbox

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post

Recents