দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ)প্রতিনিধি :
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে সীমান্তঘেষা পাহাড়ি খরস্রোতা চেলা নদীতে সম্প্রতি ড্রেজিং পদ্ধতিতে
চালু হয়েছে অবৈধ বালু উত্তোলন। এতে ভয়াবহ ভাঙনে হুমকির সম্মুখিন নদীর উভয় তীরের
ফসলি জমি, জনবসতি, হাটবাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনাসমুহ। মেঘালয় থেকে নেমে
আসা খরস্রোতা ওই নদীর কুলঘেষা পূর্ব চাইরগাঁও, সােনাপুর, সারপিনপাড়া, রহিমেরপাড়া, নাছিমপুর ও
সারপিননগরসহ বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি, বসতভিটা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন স্থাপনা
ইতিপূর্বে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। কিন্তু চলতি ভরা বর্ষা মৌসুমে নতুনভাবে আবিস্কৃত রাক্ষুসে
যন্ত্রদানবের (ড্রেজিং মেশিন) ভয়াল থাবায় ভাঙনের তীব্রতায় ফসলি জমিসহ বাস্তুভিটা হারিয়ে
নি:স্ব হওয়ার ভয়ে শঙ্কিত স্থানীয় ভুক্তভােগীরা।
উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার ২ নং নরসিংপুর ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহমান
পাহাড়ি খরস্রোতা চেলা নদীর ভাঙনে গেল বছর ২০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে এখন নিঃস্ব।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান- চেলা নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজার মেশিন
বসিযে গভীর থেকে বালু উত্তোলন করায় সৃষ্ট ভয়াবহ ভাঙনে কপাল পুড়ছে নদীপাড়ের অসংখ্য
পরিবারের। অপরদিকে কপাল খুলছে কতিপয় প্রভাবশালী রাঘব বােয়ালদের। এতে জড়িত রয়েছেন
এলাকার একশ্রেণীর বিত্তবান প্রভাবশালীরা। ব্যবসার নামে বালুমহাল ইজারা এনে বেপরােয়া দাপট
খাটিয়ে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিযে নদীর গভীর থেকে বালু উত্তোলনের মহােৎসবের
প্রতিযােগিতায় মেতে উঠেছেন তারা। ফলে স্থানীয় চাইরগাঁও ক্যাম্পের বাজার, নাছিমপুর বাজার,
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্থাপনাসহ শতাধিক পরিবারের সর্বস্ব নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা
করছেন অভিজ্ঞ মহল।
উল্লেখ্য, দুই বছর পূর্বে নদীর ভাঙনরােধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবিতে এলাকার হাজারাে মানুষ
মানববন্ধনসহ জেলা প্রশাসক সুনামগঞ্জ বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করায় গেল বছর ওই নদীর
ইজারা প্রদান বন্ধ ছিলাে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে চলিত বছরে আবারও নদীর বালুমহল ইজারা দেওয়ায়
হুমকিতে রয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী।
নদীপাড়ের পূর্ব চাইরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আবুল হােসেন বলেন, গত বছর নদীভাঙনে আমার তিন একর
জমিসহ একটি দালানঘর নদীগর্ভে বিলীন হলে ক্ষতি পুষাতে সংশ্লিষ্ট মহলে আমি অনেক দৌড়ঝাঁপ
করেও কোনাে ফল হয়নি। এবছর আবারাে নদী ভাঙনের ভয়াবহতায় শিগগির কোনাে ব্যবস্থা না
নিলে আমাদের পুরাে গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা করছি।। স্থানীয় স্কলার্স একাডেমীর প্রধান
শিক্ষক ছামির আলী বলেন, গত বছর নদী ভাঙনের কবলে পড়ে ২০টি বসতভিটা, বিজিবি টহল পােস্টসহ
আমাদের প্রতিষ্ঠানটি নদী গহ্বরে চলে যায়। কিন্তু আজো আমরা কোনােরূপ সহায়তা না পাওয়ায়
একাডেমীর একমাত্র নিজস্ব জমিটুকু হারিয়ে এখন স্থানীয় এক ভদ্রলােকের বাড়িতে আমরা শিক্ষা
কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। নদীপাড়ের পূর্ব চাইরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা রমিজ উদ্দিন, সরাজ মিয়া, বাদল
মিয়া, মুক্ত মিয়া, আবু সিদ্দিক, চানু মিয়া গংরা বলেন, অতীতে পার্শ্ববর্তী ছাতক এলাকার কতিপয়
ইজারাদারগন বারকি নৌকা দিয়ে শ্রমিক খাটিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন করায় ব্যাপকভাবে
ক্ষতিগন্তের শিকার হইনি আমরা ভূক্তভােগিরা। আর এখন ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন
করায় আমরা কঠিন হুমকির সম্মুখিন। আমরা দ্রুত এর প্রতিকার চাই। অবৈধভাবে বসানাে
ড্রেজার মেশিন দ্রুত সরিয়ে নিযে নদীপাড়সহ এলাকার সহস্রাধিক পরিবারকে সাম্প্রতিক আগ্রাস
ভাঙনের কবল থেকে রক্ষার দাবিতে উর্ধতন প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ভুক্তভােগী
এলাকাবাসী।
এব্যাপারে স্থানীয় নরসিংপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূর উদ্দিন আহমদ বলেন, গত কযেক বছর ধরে
ইজারাদাররা বালুমহল ইজারা এনে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে আসছিল। কিন্তু অহরহ বালু উত্তো
করায় নদীর গভীরতা বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট ভাঙনরােধে ইজারা বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন
করলে সেবছর ইজারা প্রদান স্থগিত থাকার পরেও নদী পার্শবর্তী কয়েকটি স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়
এবারও পূনরায় বালুমহল ইজারা এনে ড্রেজিং পদ্ধতিতে বালু উত্তলন করা হচ্ছে। এভাবে বালু উত্তোলনে ভাঙন অব্যাহত থাকলে সহস্রাধিক পরিবারের জমিসহ বসতভিটা নদীতে তলিয়ে যাওয়ার আশংকা
রয়েছে। আমি এব্যাপারে বহুল আলােচিত স্থানীয় চেলা নদীর ভাঙনরােধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহনে
দাবিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক ও সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মহােদয়ের হস্তক্ষেপ
কামনা করছি।
Commentbox