শাহীন আলম কোম্পানীগঞ্জঃ
কোম্পানীগঞ্জে ধলাই সেতুর তলদেশ থেকে অবাধে চলছে বালু উত্তোলন। গত চার-পাঁচদিন ধরে এ স্থান থেকে উৎসবের আমেজে বালু উত্তোলন করতে দেখা গেছে। এ কারণে সিলেটের দীর্ঘতম এ সেতুর স্তম্ভ দুর্বল হয়ে যেকোন সময় ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার (১০ জুন) বালু উত্তোলনের সময় হাতেনাতে ৯ জনকে আটক করে টাস্কফোর্স। এর মধ্যে পাঁচজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড এবং চারজনের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ এরশাদ মিয়ার নেতৃত্বে গঠিত টাস্কফোর্স বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিযান চালিয়ে এই জরিমানা করেন। কারাদণ্ড প্রাপ্তরা হলেন- আকতার হোসেন, মিলন, জুনায়েদ, সোহেল ও আমিনুল।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পাহাড়ি ঢলে ধলাই নদীর পানি নামার পরই বালু উত্তোলনকারীরা সেতু ঘেঁষে বালু উত্তোলন শুরু করে। খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে টাস্কফোর্সের একটি দল এই অবৈধ তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করে দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টা অভিযান চালায়। এ সময় ধলাই সেতু এলাকা থেকে নৌযানে বালু উত্তোলনের সময় নয়জনকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তাদের মধ্য থেকে চারজন থেকে ১ লাখ টাকা করে মোট ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। অপর পাঁচজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। এ সময় কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত সোমবার প্রথম দফা সেতু এলাকায় অভিযান চালায় টাস্কফোর্স। সেদিন টাস্কফোর্সের অভিযানের খবর পেয়েই বালু উত্তোলনকারীরা দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুমন আচার্য বলেন, গত রোববার সেতুর দুই পাশে ৫শ’ গজ দূরত্বে লাল নিশান গেড়ে দেওয়া হয়। যাতে এই সীমানার ভেতর কেউ বালু উত্তোলন না করেন। তারপরও বালু উত্তোলনকারীরা তা মানছে না। তিনি বলেন, পাহাড়ি ঢলে নদীতে পানি আসার পরই এ ধরনের তৎপরতা শুরু হয়েছে। এতে ধলাই সেতুর স্তম্ভ দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। অবৈধ এই তৎপরতা রোধে টাস্কফোর্সের অভিযান চালানো হয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে।
জানা গেছে, ১৪২৮ বাংলা সনের জন্য ধলাই নদীর কালাসাদক-২ ও তৈমুরনগর মৌজার নদী অংশ লিজ নেন প্রদীপ নামের এক ব্যক্তি। পরে সেতুর ৫ শ' গজ দক্ষিণে লীজের সীমানা চিহ্নিত করে দেন উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু লীজ গ্রহীতা প্রদীপ ও তার সহযোগীরা প্রশাসনের চিহ্নিত সীমানা মানছেন না।
স্থানীয়রা জানান, ধলাই নদীতে বালুমহাল ইজারা নিয়ে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে এ সেতু হুমকির মুখে পড়েছে। এখন বর্ষা মৌসুম চলছে। এ সময় মুষলধারে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বন্যা হওয়ায় আরও বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে সেতুটি।
প্রসঙ্গ, ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারির পাশের ধলাই নদের উভয় তীরের মানুষের যাতায়াতের জন্য ২০০৩ সালে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১২ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রায় ৪৩৪ দশমিক ৩৫ মিটার দীর্ঘ ও ৯ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থের সেতুটি সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম। টানা তিন বছর কাজ চলার পর সেতুটি ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সেতুর স্থায়িত্ব ধরা হয় ৭৫ বছর। ওই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান সেতুর উদ্বোধন করেন। সেতু নির্মিত হওয়ায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর ও উত্তর রনিখাই ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক গ্রামের ৩০ সহস্রাধিক মানুষ সরাসরি সড়ক যোগাযোগের আওতায় আসে৷ পাশাপাশি দেশের সর্ববৃহৎ ভোলাগঞ্জ কোয়ারি থেকে পাথর পরিবহন সহজতর হয়।
Commentbox