শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দণ্ডিত আসামির সঙ্গে কারাগারে জগন্নাথপুরের মেয়ের বিয়ে।

সুনামগঞ্জে যাবজ্জীবন দণ্ডিত এক আসামির সঙ্গে কারাগারেই বিয়ে হয়েছে দুলবী বেগম নামে এক নারীর।

মঙ্গলবার ৬ লাখ টাকা দেনমহরে দুলবী বেগমের সঙ্গে বিয়ে হয় যাবজ্জীবন দণ্ডিত কয়েদি আব্দুর রশীদের।

এদিকে বিয়ের খবর শুনে কিছুটা স্বস্তি মিললেও পেছনের গল্পটা মোটেও মধুর নয়।

জানা গেছে, ২০১০ সালে জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের সিরামিশ গ্রামের মৃত রিয়াজ উদ্দিনের মেয়ে দুলবী বেগমের সঙ্গে পরিবারের অগোচরে ইসলামি শরিয়া মোতাবেক বিয়ে হয় একই এলাকার নবীনগর গ্রামের মৃত ছাইম উল্লাহর ছেলে আব্দুর রশীদ ওরফে শহিদের।

গোপনে বিয়ের এই সম্পর্ক জানাজানি হলে বিয়ের কিছু দিন পর যুক্তরাজ্যে চলে যান শহিদ। সেখানে গিয়ে দুবলীর সঙ্গে বিয়ের সম্পর্ক অস্বীকার করেন এ যুবক। এর কিছু দিন পর একটি ছেলেসন্তানের জন্ম দেন দুবলী বেগম।

বিয়ে ও ছেলে সজিবের স্বীকৃতির দাবিতে ২০১১ সালে নারী ও শিশু আদালতের দারস্থ হন ভুক্তভোগী নারী। কিন্তু বিয়ের কোনো আইনি তথ্যপ্রমাণ না থাকায় মামলায় নানা জটিলতায় পড়তে হয় দুলবী বেগমকে। মামলা চলাকালীন দেশে ফিরে বিয়ে করেন অভিযুক্ত শহিদ। দ্বিতীয় পক্ষের ঘরে দুই সন্তান রয়েছে তার।

এদিকে ভুক্তভোগী নারী দুলবী বেগমের সন্তানের ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত হলে বিচারাধীন মামলায় ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর আব্দুর রশীদ শহিদ মিয়াকে অভিযুক্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন আদালত।

পরে সম্প্রতি ভুক্তভোগী নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে উচ্চ আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত যুবক আবেদন করলে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত। দীর্ঘ মামলা জটিলতার পর আদালতের হস্তক্ষেপে বিয়ের মাধ্যমে স্ত্রীর স্বীকৃতি পাওয়ায় খুশি স্বজন ও সংশ্লিষ্টরা।

ভুক্তভোগী নারী দুলবী বেগম বলেন, পরিবারের অগোচরে বিয়ে হয়। পরে বিয়ের কথা জানাজানি হলে তিনি বিদেশ চলে যান। সেখানে গিয়ে সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। সন্তান হওয়ার পর সব কিছু অস্বীকার করেন। দীর্ঘদিন মামলা চালিয়েছি। অনেক কষ্ট করেছি। এতদিন পর হলেও আমি আমার সন্তানের স্বীকৃতি পেয়েছি। এখন যদি সুন্দর মতো সংসার করতে পারি। তারা যেভাবে আমারে মেনে নিয়েছেন, আমি আশা করি বাকি দিন কিছুটা ভালো যাবে।

ভুক্তভোগী নারীর মা সরলা বেগম বলেন, আদালতের এই রায়ে আমি খুশি। আমার মেয়েটা যাতে সুন্দরভাবে সংসার করতে পারে, সে ক্ষেত্রে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। আমার মেয়েটা অনেক কষ্ট করছে, যা বলে প্রকাশ করা যাবে না। এবার একটু শান্তিতে থাকুক।

উচ্চ আদালতের নির্দেশ প্রতিপালন করতে এই বিয়ের আয়োজন।

আদালতের পরবর্তী নির্দেশ পেলে কয়েদি কারাগার থেকে বের হতে পারবেন বলে জানিয়ে জেলা কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার হুমায়ূন কবির বলেন, আমরা আদালতের নির্দেশ পালন করেছি। ছেলেই বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা করেছে। বিয়ের কাগজপত্র আদালতে গেলে আদালত জামিনের নির্দেশ দিলে কয়েদির মুক্তিতে আর কোনো বাঁধা থাকবে না।

 

জগন্নাথপুর পত্রিকা অনলাইন ডেস্ক :

সংশ্লিষ্ট সংবাদ