তোরা দেখো নাই বাপু
১৯৭১ সাল।
সেদিনে মুজিবই ছিল
সাড়ে সাত কোটি বাঙালির প্রাণ।
তোরা দেখো নাই বাপূ
বাংলার বুকে রক্তের হুলি খেলা,
সেদিনে মুজিবই ছিল
বাঙালির একমাত্র আশারই ভেলা।
তোরা দেখো নাই বাপু
বাঙালির চোখে মুখে
তাণ্ডব ঝড়,
মুজিবের বজ্র কন্ঠের আওয়াজে
শত্রুরা কাঁপে থর থর।
ওরা রাতের আঁধারে
নিরস্ত্র বাঙালির বুকে
চালায় গুলি ;
বহে রক্তের ঢল!
জ্বলে ওঠে দাবানল
বাংলার বুক চিরে!
সাঁজ সাঁজ রবে
বেজে ওঠে যুদ্ধের দামামা!
বেজে ওঠে সাইরেন!
ভয়ে কাঁপে ভীরু
কাঁপে না সে বীর ;
গর্জে ওঠে এক মুজিবের শির!
গর্জে ওঠে বীর বাহু!
গর্জে ওঠে তর্জনী!
“এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ;
এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম!”
“যার যা আছ। তাই নিয়ে শত্রুর
মোকাবেলা করো।”
“রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব ;
দেশকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ্।”
যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালি।
পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী
মিথ্যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায়
বন্দি করে রাখে বাঙালির প্রাণ প্রিয়
নেতা শেখ মুজিবকে।
যুদ্ধ শুরু হলো!
তুমুল যুদ্ধ!
এক ভয়ঙ্কর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ!
এক মহা কালের যুদ্ধ!
গুড়ুম গুড়ুম শব্দে বাংলার আকাশ
প্রকম্পিত হয়ে উঠলো!
স্তব্ধ হলো জীবনের গতি!
সুদীর্ঘ নয়টি মাস।
লুঠেরা লুঠ করেছে!
লুণ্ঠন করেছে এদেশের সর্বস্ব!
ছিনিয়ে নিয়েছে মা বোনের ইজ্জত!
ছিনিমিনি খেলেছে জীবন নিয়ে ;
ইজ্জত নিয়ে!
কেড়ে নিয়েছে পরণের বস্র!
ছিঁড়ে নিয়েছে গায়ের পশম!
গুলি করেছে অকাতরে!
ভারি হয়ে উঠেছে
বাংলার আকাশ বাতাস
করুন কান্নার সুরে!
বিনাশ করেছে লক্ষ তাজা প্রাণ!
মানুষ হয়েছে শৃগাল শকুনের খাদ্য!
অবর্ণনীয় এক বন্যার কবলে পড়ে
প্রাণ প্রিয় মাতৃভূমি!
এক সাগর জল আর
এক সাগর রক্তের মিশ্রিত বন্যায়!
বিনিময়ে পোহালো রাত।
বাংলার আকাশে রক্তিম সূর্য উদিত হলো।
কেটে গেলো দুঃখের অমানিশা।
বাঙালিরা ফিরে পেলো তাদের স্বাধীনতা।
“জয় বাংলা” শ্লোগানে শ্লোগানে
মুখরিত হলো বাংলার আকাশ বাতাস।
ফিরে পেলো বাঙালিরা
তাদের প্রাণ প্রিয় নেতাকে।
বাঙালি ভুলে গেলো সব শোক।
দেখে তাদের প্রিয় মুজিবের মুখ।
লেখক: সহকারি অধ্যাপক: জনতা মহাবিদ্যালয়, মইনপুর, ছাতক, সুনামগঞ্জ।